Owner of the website

Owner of the website
Niloy Rafique

গরু চরাতে লাঠি লাগেই!!!



আমরা স্বভাবতই এমন জাতিতে পরিণত হয়েছি যে,দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে কিছু শিখতে চাই না।
তাই,শাসন ছাড়া পুঁথিগত বিদ্যাই অসম্ভব। আর নৈতিকতা, সে তো যোজন যোজন দূর।

আপনি যদি কোনো দেশকে আদর্শ মনে করে শিক্ষকদের হাত থেকে বেত কেঁড়ে নিয়ে থাকেন;তাহলে আপনাকে বলছি ঐ আদর্শিক দেশে কখনোই ছাত্র কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছিত হয় নি,হবে না। আর শিক্ষক হত্যার মতো গর্হিত কাজ তাদের কল্পনার বাইরে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সেই পরিবেশ হয়ে উঠে নি। আমাদের মন যতটা আশাব্যঞ্জক; বাস্তব কর্মদক্ষতা ততটাই হতাশাব্যঞ্জক। তাই চিন্তার সাথে কাজের সমন্বয় সাধন যতদিন না করতে পারবো ততদিন এসব উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ গ্রহণ না করাই ভালো।

সকল মানুষের স্বভাব-চরিত্র,মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা এক নয়। আবার সকলের মেধা বা বুদ্ধি-বৃত্তিও এক নায়। তাই কেউ পুঁথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই যে,শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় তাকে নিযুক্ত করতে হবে-তা নয়। আবার একইভাবে সকল শিক্ষার্থী-ই যে শিক্ষার নিগুঢ় রস আস্বাদন করে স্বশিক্ষিত এবং সুশিক্ষিত হয়ে উঠবে তাও বলছি না। সব কিছুর জন্য প্রয়োজন একটি যথাযথ মানদণ্ড যার মাধ্যমে এসব বিষয় পর্যালোচনা সহজ হয়ে উঠবে।

জবাবদিহিতাবিহীন কোনো কাজই যথাযথ সময়ে এবং যথাযথ পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয় না; হলেও এর পরিমান অতি নগন্য। তাই,শিক্ষা ব্যবস্থাতেও চাই এই জবাবদিহিতা যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের প্রতি আরোপ করা প্রয়োজন। এতে শিক্ষক যেমনি তার মহান পেশার মহান দায়িত্ব পালনে ব্রতী হবেন। একইভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যেইও তাদের প্রকৃত দায়িত্ববোধের সঞ্চার হবে। তবে শিক্ষকের জবাবদিহিতা তার বিবেক দ্বারাই করা সম্ভব যদি নিয়োগের সময় আদ্যোপান্ত বুঝে নিয়োগ করা যায়। শিক্ষকের জীবিকা নির্বাহের জন্য যেমনি অর্থ উপার্জন বাধ্যতামূলক,তেমনি শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যও নিঃস্বার্থ হওয়া উচিৎ। অপরদিকে শিক্ষার্থীর জবাবদিহিতার জন্য শিক্ষকই যথেষ্ট। সঠিক অনুশাসন পালনে অক্ষম হলে তার শিক্ষার্জনের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। যে অনুশাসন শিখবে না;মানবে না। সে শিক্ষা গ্রহন করেও তা মানবে না এবং বাস্তব ক্ষেত্রে এর সঠিক প্রয়োগ করবে না। তাই তাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিতারিত করাই শ্রেয়। যদিও আমূল পরিবর্তন সাধিত হলে এমন সিদ্ধান্তও নিতে হবে না; শিক্ষার্থী নিজেই নিজের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন।

কিন্তু যতদিন এ কাঙ্খিত পরিবর্তন না আসে ততদিন এসব অনুশাসন পালন বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিক্ষকের নাম শুনলে যেমন শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় নত হওয়া উচিৎ। তেমনি ক্ষানিকটা ভয়ও পাওয়া উচিৎ। আমি শিক্ষকের নিকট জবাবদিহিতায় বাধ্য থাকলে আর যাই করি না কেন অন্যায় এবং অশিক্ষাসূলভ আচরন করতে পারবো না। এ ব্যাপারে অবিভাবকেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আপনার সন্তানকে যেমনি 'ননির পুতুল' করে লালন পালন করবেন; ঠিক তেমনিই শিক্ষকের বাধ্যগতও করবেন। এতে করে উভয়েই উপকৃত হবেন। বর্তমান সমাজের শিক্ষার্থীর
হাতে বই তুলে দেওয়ার সাথ সাথে অবিভাবকের হাতে আব্রাহাম লিংকন এর সেই ঐতিহাসিক চিঠি তুলে দেওয়া সময়ের দাবি। সাথে সাথে বাদশাহ আমগীর এর কথাও মনে করিয়ে দেওয়া যায়। একইভাবে শিক্ষকের হাতে লাঠি তুলে দিলেও মন্দ হয় না।

শিক্ষক অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা প্রদান করেন বলে তাঁকে আপনি অশ্রদ্ধা করতে পারেন না। তিনি আপনার পথ প্রদর্শক;তিনি আপনার গুরু;তিনি আপনার মহাজন;তিনি আপনার জ্ঞানপিতা। আপনি এটা অস্বীকার করার দুঃসাহসিকতা দেখাতে পারেন না।
গোলাম মোস্তফা বলেছেন," পিতা গড়ে শুধু শরীর,মোরা গড়ি তার মন।
পিতা বড় কিবা শিক্ষক বড়-বলিবে সে কোন জন?"
স্বামী বিবেকানন্দও শিক্ষাককে পিতার সাথে তুলনা করেছেন।
শিক্ষকতা আসলে কোনো পেশা না বরং সকল পেশার স্রস্টা।
তাই,শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় তাহলে শিক্ষক জাতির কে বা কি?
উত্তর যদি ইতিবাচক হয় তাহলে কেন তাঁরা লাঞ্ছিত?
এর জবাব খুঁজতে হবে; তাদের হাতে শিক্ষার্থীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
গরু চরাতে লাঠি লাগেই!
নাহয় গরুর শিংয়ের আঘাতে রাখালের প্রাণনাশের আশংকা থাকে!!
আর কোনো শিক্ষকের জীবন দিয়ে যেন জাতির এই প্রতিদান দিতে না হয়।


লেখক নিলয় রফিক

শিক্ষার্থী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া।


2 comments:

  1. সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ লেখনী।
    মা শা আল্লাহ।

    ReplyDelete

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.